প্রচলিত আছে, যুদ্ধের ময়দানে হয় মারো না হয় মরো। অর্থাৎ প্রতিযোগিকে হারাতে না পারলে আপনার পরাজয় নিশ্চিত। আর ব্যবসায়িক যুদ্ধে টিকে থাকতে হলে প্রয়োজন কাস্টমার বা ক্রেতাদের ধরে রাখা। খুলনা মহানগরীতে গত কয়েক বছরে ফুড কোর্ট ব্যবসায় এক ধরণের ব্যবসায়িক যুদ্ধ বা প্রতিযোগিতা চলছে। আর এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার যুদ্ধে হেরে রণেভঙ্গ দিয়েছে প্রথম ফুড কোর্ট লা ফিয়াস্তা।
খুলনায় প্রথম ফুড কোর্ট ব্যবসা শুরু হয় ২০১৮ সালে লা ফিয়াস্তা’র মাধ্যমে। পরবর্তীতে লা ফিয়াস্তা’র পাশাপাশি চালু হয়েছে চিল আউট, রাজ মহল, শ্যানন রিভার ভিউ, ক্লাউড নাইন, ব্লু-অর্কিড, ব্লেসড ট্রি, ফুড স্টুডিও এবং নির্মাণাধীন রয়েছে স্পাইসি ফুড আইসল্যান্ড।
গত কয়েক বছরে খুলনা শহরে ফুড কোর্ট এবং রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় ছোটখাট বিপ্লব ঘটেছে। তবে এসব ফুড কোর্ট বা রেস্টুরেন্টগুলোতে খাবারের মান আর দাম নিয়ে প্রশ্ন ছিলো সবসময়। এ প্রতিযোগিতায় অন্যদের পেছনে ফেলতে পারেনি বলেই সম্প্রতি বন্ধ হয়ে গেছে খুলনায় সর্বপ্রথম চালু হওয়া ফুড কোর্ট লা-ফিয়াস্তা।
লা ফিয়াস্তার খুব কাছেই চালু হয়েছে আরেকটি ফুড কোর্ট রাজমহল। সেখানে খেতে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জান্নাত নাদিয়া বলেন, প্রথম দিকে লা ফিয়াস্তা ফুড কোর্টে গেলে বসার জায়গা পাওয়া যেতো না। অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থাকতে হতো। তবে নতুন নতুন ফুড কোর্ট চালু হওয়ায় এবং কম দামে ভালো খাবার সরবরাহ করায় ধীরে ধীরে এই (লা ফিয়াস্তা) ফুড কোর্টটির কাস্টমার কমতে থাকে।
ব্লু অর্কিড ফুড কোর্টে সপরিবারে খেতে আসা মারুফ হোসেন বলেন, “খুলনায় নতুন নতুন অনেকগুলো ফুড কোর্ট হয়েছে, ব্যাপারটি ভালো। তবে ঘুরে ফিরে সব জায়গায় একই রকম প্লেটার, এতে অনেকেই বিরক্ত। ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের নতুন আইটেম এবং ভালো পরিবেশ সবসময় ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে।”
লা ফিয়াস্তা ফুড কোর্টের অধিকাংশ স্টল নতুন করে ব্যবসায় ফিরে আসতে পারেনি। তবে খাবারের ভিন্নতা এবং ভালো মান দিয়ে যে ব্যবসায় টিকে থাকা যায় তার উদাহরণ হতে পারে লাজিজ। লাজিজ-এর স্বত্ত্বাধিকারী খুলনা গেজেটকে জানান, আমরা সবসময় কাস্টমারদের কম দামে ভালো খাবার সরবরাহ করার চেষ্টা করেছি, এখনও করি। ওই ফুড কোর্টে (লা-ফিয়াস্তা) অনেকদিন ধরেই তেমন ক্রেতা সমাগম ছিলো না। তাই আমরা এই ফুড কোর্টে (ক্লাউড নাইন) চলে এসেছি। এখানেও আমরা কাস্টমারদের থেকে খাবার নিয়ে ইতিবাচক রিভিউ পাচ্ছি এবং তাদের পছন্দ অনুযায়ী ফ্রেশ খাবার সরবরাহ করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক শরিফ মোহাম্মদ খানের কাছে নতুন ব্যবসায় টিকে থাকার উপায় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি খুলনা গেজেটকে বলেন, “নতুন ব্যবসায় টিকে থাকতে হলে প্রথমতঃ আপনার উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তি থাকতে হবে এবং মার্কেটে বিদ্যমান অন্য ব্যবসায়ীদের সাথে গতানুগতিকভাবে না চলে নিত্য নতুন পরিবর্তন এনে ক্রেতাদের আকর্ষণ ধরে রাখতে হবে। নতুন কোনো স্টলে প্রথমবার আমরা স্বাভাবিকভাবে ঘুরতে যাই, কিন্তু দ্বিতীয়বার যাওয়ার আগে আমরা চিন্তা করি সেখানে গেলে আমাদের প্রয়োজনগুলো পরিপূর্ণ হবে কি না। ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটাই ভাবতে হবে কোনো ক্রেতা আমার দোকানে একবার আসলে তার চাহিদাগুলো এমনভাবে পরিপূর্ন করতে হবে যাতে করে দ্বিতীয়বার সে আমার কাছেই আসে।”
এছাড়া তিনি বলেন, “নতুন কোনো ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে অনেকেই বাজার পর্যালোচনা বা মূল্যায়ন করেন না। নতুন কোনো ব্যবসায় আসতে হলে অবশ্যই আগে সেই ব্যবসার মূলধন, ক্রেতা, ঝুঁকি এবং সুযোগ সম্পর্কে যাচাই বাছাই ও বিবেচনা করতে হবে।”
খুলনা গেজেট/এমএইচবি